গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে যে বা যারা খুঁটিনাটি জানতে ইচ্ছুক এবং ষাঁড় গরুর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ধারণা পেতে চান, তারা আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কেননা আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে চলেছি— গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা, কম খরচে গরু মোটাতাজাকরণ করার উপায়, গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড।
তো আপনি যদি গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধা ও খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলে উল্লেখিত সকল বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং মাথায় রাখুন। পাশাপাশি আরো জেনে নিন- তিন মাসে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি ও গাভীর দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা অনেক। কেননা যারা খামারবাড়ি দিয়েছেন অথবা দীর্ঘদিন যাবত বাড়িতেই গরু লালন পালন করছেন, মূলত তাদেরকে অবশ্যই গরুর স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা একটি গরুকে যদি মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয় তাহলে গরুর ওজন সঠিক ভাবে বৃদ্ধি পায় ও স্বাস্থ্য ঠিকঠাক থাকে।
আর তাছাড়াও গবাদি পশু পাখির সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। আর তাই আমরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা তুলে ধরবো। তবে হ্যাঁ, অনেকেই জানতে চান- গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
মূলত যারা খামারি অথবা খামার বাড়িতে কাজ করেন তারা গরু মোটাতাজা করণ বিষয়টি সম্পর্কে জানবেন। তবে আপনি যদি এ বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের জন্য এক কথায় উত্তর হবে— একটি গরুর আকার আকৃতি, ওজন, মাংসের পরিমাণ এবং দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যে সকল খাদ্য পণ্য গুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা হয় এবং সুচিকিৎসা প্রদান করা হয় মূলত এই পুরো প্রসেসটাই হচ্ছে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি।
এখন আসুন ধারাবাহিকভাবে জেনে নেই– গরু মোটাতাজাকরণের জন্য গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত। পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধা সমূহ, গরু মোটাতাজাকরণের অসুবিধা সমূহ এবং গরু মোটাতাজাকরণের অন্যান্য উপায় সমূহ সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ গো খাদ্য কি | গো খাদ্য কাকে বলে | গো খাদ্যের তালিকা এবং প্রয়োজনীয়তা
গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য তালিকা | গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
একটি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য মূলত খাদ্য হিসেবে এমন কিছু খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন পরে, যেগুলোতে খাদ্যের প্রত্যেকটি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। আর তাছাড়াও, গরু মোটাতাজাকরণের জন্য মূলত বেশ কয়েকটি খাবার একত্রে মিশিয়ে খাওয়ানোটা অধিক বেশি উপকারজনক।
আমরা যেমন কখনো কখনো দেহের ওজন দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন মিল্ক শেক অথবা চকলেট শেক খেয়ে থাকি, আবার কখনো কখনো আলাদা আলাদা ফলের সংমিশ্রণে তৈরিকৃত ড্রাই ফ্রুটস বা এ-জাতীয় অন্যান্য খাবারগুলো পুষ্টিকর খাবার হিসেবে প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি খাই, ঠিক একইভাবে গরুকে মূলত পোয়াল এবং কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পাশাপাশি দানাদার হিসেবে এসব খাদ্য খাওয়ানোর দরকার হয়। যা গরুর স্বাস্থ্যকে সঠিকভাবে বাড়াতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা তৈরীর জন্য যে সকল খাদ্য উপাদান গুলো রাখতে হবে সেগুলো হলো –
- খেসারী কালাই এর ভুসি
- গমের ভুসি
- শুষ্ক খাদ্য
- তিলের খৈল
- ঝিনুকের পাউডার
- মাছের গুড়া
- মেটাবলিক শক্তি
- লবণ এবং আমিষ।
তবে হ্যাঁ, এই প্রত্যেকটি খাদ্যপণ্য গুলো অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ করতে হবে। কেননা প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খাওয়ানো গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতির থেকে অবনতি ঘটাতে পারে। এর জন্য গরুর দানাদার খাদ্য তৈরিতে উল্লেখিত খাদ্য উপাদান গুলো নিম্নলিখিত পরিমাণে রাখার চেষ্টা করবেন। যথা —
- খেসারী কালাই এর ভুসি ২০০ গ্রাম
- গমের ভুসি ৫৪০ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য ৯০০ গ্রাম
- তিলের খৈল ১৫০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার ২৫ গ্রাম
- মাছের গুড়া ৮০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি ১০.৭০ গ্রাম
- লবণ এবং আমিষ ২০৯ এবং ৫ গ্রাম।
এখন কথা হচ্ছে, গরু মোটাতাজাকরণের জন্য শুধুমাত্র কি এই দানাদার খাদ্যগুলোই খাওয়াতে হবে নাকি এর বাইরেও আরও খাবার রয়েছে! মূলত গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা হিসেবে গবাদি পশু বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি খাদ্য তালিকা সাজেস্ট করেছেন। যেগুলো আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছি।
গাভীর দানাদার খাদ্য তালিকা | একটি গরুর দৈনিক খাদ্য তালিকা
আপনি মূলত মোটাতাজাকরণের জন্য খাদ্য তালিকায় গরুকে নিম্ন বর্ণিত খাদ্যগুলো উল্লেখিত নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়মিত খাওয়াতে পারেন। যেটা আপনার গুরুর স্বাস্থ্য ভালো রাখবে এবং গরু মোটাতাজাকরণে বেশ কাজে আসবে।
তালিকা নাম্বার:-১
- চাল ভাঙ্গা- ১০০গ্রাম
- গম ভাঙ্গা- ১০০ গ্রাম
- গমের ভুষি- ২৫০ গ্রাম
- ধানের ভুষি- ২৮০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার- ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১১.৪৯ গ্রাম
- আমিষ- ১৯৬ গ্রাম
- তিলের খৈল- ২০০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়া- ৪০ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
তালিকা নাম্বার:-২
- ভুট্টা ভাঙ্গা-১৮০ গ্রাম
- গমের ভুষি- ২০০ গ্রাম
- ধানের ভুষি- ২৩০ গ্রাম
- খেসারি ভুষি- ১৫০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার- ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১১.০৯ গ্রাম
- আমিষ- ১৭৯ গ্রাম
- সরিষার খৈল- ১৬০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়া- ৫০ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
তালিকা নাম্বার:-৩
- ধানের ভুষি- ৫৩০ গ্রাম
- খেসারি ভুষি- ১৪০ গ্রাম
- মসুর ভুষি- ১০০ গ্রাম
- সয়াবিন মিল- ৫০ গ্রাম
- তিলের খৈল- ১৫০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার- ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১০.৪৯ গ্রাম
- আমিষ- ১৮৩ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
তালিকা নাম্বার:-৪
- চাল ভাঙ্গা- ১০০ গ্রাম
- খেসারি ভাঙ্গা- ১০০ গ্রাম
- গমের ভুষি- ১৫০ গ্রাম
- ধানের ভুষি- ৩৮০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার- ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১১.০৬ গ্রাম
- আমিষ- ১৮৪ গ্রাম
- নারিকেলের খৈল- ২০০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়া- ৪০ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
তালিকা নাম্বার:-৫
- চাল ভাঙ্গা- ২০০ গ্রাম
- গমের ভুষি- ১৩০ গ্রাম
- ধানের ভুষি- ২০০ গ্রাম
- মসুর ভুষি- ২৪০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার- ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১১.০৪ গ্রাম
- আমিষ- ১৮১ গ্রাম
- তিলের খৈল- ১৫০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়া- ৫০ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
তালিকা নাম্বার:-৬
- চাল ভাঙ্গা- ২০০ গ্রাম
- গমের ভুষি- ৩০০ গ্রাম
- ধানের ভুষি- ২৩০ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার: ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্য- ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তি- ১১.২৬ গ্রাম
- আমিষ- ১৮৭ গ্রাম
- সরিষার খৈল- ১৯০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়া- ৫০ গ্রাম
- লবণ- ০৫ গ্রাম
আরও পড়ুনঃ রোগিং কি | রোগিং এর অপর নাম কি | রোগিং কেন করবো?
ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্য তালিকা
যারা নতুন খামারি তারা মূলত এটা বুঝে উঠতে পারেন না যে, দৈহিক কত কেজি ওজনের গরুকে ঠিক কতটুকু পরিমাণে খাবার খাওয়ানো যাবে। এ বিষয়ে ধারণা অর্জনের জন্য আমরা সাজেস্ট করব অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার অথবা নিকটস্থ পশু হাসপাতালে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করবার।
তবে হ্যাঁ আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা গরু মোটাতাজা করণ এর জন্য ১৫০ থেকে ২০০ কেজি ওজনের একটি গরুকে প্রতিদিন ঠিক কতটুকু পরিমাণ খাবার খাওয়ালে স্বাস্থ্য ঠিকঠাক থাকবে এবং ওজন ও মাংস + দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সেটা বোঝার সুবিধার্থে আমরা নিচের তালিকাটি তুলে ধরছি। যথা —
- মোলাসেস ব্লক ৩০০ গ্রাম
- খড় ৪ কেজি
- তিলের খৈল ৪০০’ গ্রাম
- হাড়ের গুঁড়া ৫০ গ্রাম
- লবণ ৫০ গ্রাম
- ঝোলাগুড় ২৫০ গ্রাম
- সবুজ কাঁচাঘাস ১২ কেজি
- দানাদার খাদ্য ৩ কেজি
- চালের কুঁড়া ১ কেজি
- গমের ভুসি ১.২৫ কেজি
তবে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আপনি আপনার গরুকে মোটাতাজাকরনের জন্য যত প্রকার দানাদার খাদ্যই খাওয়ান না কেন, অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। কেননা পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের অভ্যন্তরে বিপাকপ্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পাদিত হয়, ফলে একটি গরু যে সকল পুষ্টিকর খাবারই খাক না কেন সেগুলো বেশ ভালো গায়ে লাগে এবং শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
তাই সবসময় চেষ্টা করুন গরুকে পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার এবং ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্য তালিকা মেইনটেইন করে চলবার। আর হ্যাঁ, গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, ঠিক একই ভাবে অসুবিধাও রয়েছে। তাই আলোচনার এ পর্যায়ে গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো তুলে ধরব।
গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর উপকারিতা
একটি গরুকে মোটাতাজাকরণের জন্য দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর ফলে মূলত নিম্নলিখিত উপকারিতা বা সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। যথা—
- গরুর স্বাস্থ্য ঠিক থাকে, কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণ দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর ফলে শরীরে পুষ্টি সরবরাহ হয়।
- খাদ্যের অপচয় কম হয় এবং দানাদার খাদ্য গবাদি পশুর মুখে রুচি আনে।
- দানাদার খাদ্য একত্রে মিশ্র প্রক্রিয়ায় খাওয়ানোর ফলে শ্রম, সময় উভয়ই কম খরচ হয়।
- মোটাতাজাকরণের জন্য দানাদার খাদ্য খাওয়ালে গরুর খাবার নিয়ন্ত্রণ এবং গরুর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ উৎপাদন হয় এবং গরুর দৈহিক ওজন, বয়স এবং শারীরিক আকার আকৃতি ইত্যাদি সকল বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অপকারিতা
অনেকেরই ধারণা গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য প্রচুর পরিমাণে খাওয়ালে গরু দ্রুত মোটা হয় এবং অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। যারা মূলত এ ধরনের চিন্তা করেন তাদের ধারণাটা একদমই ভুল। কেননা সত্যি এটাই, প্রত্যেকটি জিনিসেরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। তাই আপনি বেশি খাবার দিলেই যে গরু বেশি খাবে এবং গরু অতিরিক্ত তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যাবে এমনটা নয়।
বরং গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য পরিমাণের থেকে অতিরিক্ত দিলে খাদ্যের অপচয় হবে এবং খাদ্যের খরচ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি গরুর বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকেই রয়েছেন দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পরবর্তীতে এটা ভুলেই যান যে গুরুকে অন্যান্য আরো কিছু খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। যেমন কাঁচা ঘাস। অনেকেই সচরাচর গরুকে একবার দানাদার খাদ্য খাওয়ানো শুরু করলে কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর কথা একদমই ভুলে যান।
আবার কেউ কেউ দানাদার খাদ্য হিসেবে ভাত, জাউ জাতীয় খাদ্যগুলো গরু মোটাতাজাকরণের খাদ্য তালিকায় রাখেন। যেটা গরুর শরীরের উন্নতির নয় বরং অবনতি ঘটায়। আর এই কারণে গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর কিছু অসুবিধা হচ্ছে—
- হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি
- রুমেনের কার্যক্ষমতা হ্রাস
- খাবার সংরক্ষণের অসুবিধা সহ প্রভৃতি।
তাই সবসময় চেষ্টা করুন– গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর। এবার আসুন জেনে নেই- গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার সম্পর্কে আরো কিছু।
গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার
আজকাল বাজারে গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার পাওয়া যায় অনেক। এমনকি অনেকেই রয়েছেন যারা এই পাউডার গুলো নিয়মিত খাওয়ান। যারা এখনো পর্যন্ত গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার গরুকে দেননি তারা মূলত জানতে চান– কোন পাউডারটি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অধিক বেশি কার্যকরী এবং বিপদমুক্ত!
মূলত বাজারে অনেক ধরনেরই গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার পাওয়া যায়। তবে গরুর ধরন এবং আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার বা গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ আলাদা রকমের হয়ে থাকে। আপনি যদি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে চান তাহলে আমাদের সাজেস্টকৃত নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন। কেননা এই ভিডিওতে গরু মোটাতাজাকরন পাউডার সম্পর্কে এ টু জেড আলোচনা করা হয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সুমহ
১. কি খাবার খেলে গরু মোটা তাজা হয়?
উত্তরঃ আশ, দানাদার এবং দানাদার মিশ্রণ জাতীয় খাবার খেলে গরু মোটাতাজা হয়।
২. গরু কত লিটার পানি পান করা উচিত?
উত্তরঃ গরুর ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তাহলে সেই গরুকে দৈনিক ১০ লিটার পানি পান করানো উত্তম। অতএব বলা যায় একটি গরুর ১০ লিটার বা তার বেশি পানি পান করা উচিত।
৩. গরুকে পানি পান করানোর সঠিক সময় কখন?
উত্তরঃ গরুকে সাধারণত দিনের যেকোনো সময় পানি পান করানো ভালো। তবে যেহেতু এদের খাবার কিছুটা শুকনো জাতীয় হয়ে থাকে তাই গরুর সামনে সবসময় পানি রাখা উচিত এবং প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর ওই পানির পরিবর্তন করে দেওয়া সর্বোত্তম।
৪. গরু মোটাতাজা করার উপায় কি?
উত্তরঃ গরু মোটাতাজা করার উপায় হচ্ছে– পরিমিত খাদ্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ানো। মূলত খৈল, ভূসি, চালের গুড়া, খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া লবণ ইত্যাদি খাবার গুলো সঠিক পরিমাণে খাওয়ানোই গরু মোটাতাজা করার উপায়।
৫. গরু কি খাই?
উত্তরঃ গরুগুলো গবাদি পশু। এরা মূলত ঘাস পাতা জাতীয় তৃণভোজী প্রাণী। তবে ঘাস পাতার পাশাপাশি গরু মূলত দানাদার জাতীয় খাবার খায়।
৬. গরু মোটাতাজা করার জন্য কোন শস্য ভালো?
উত্তরঃ গরু মোটাতাজা করার জন্য ভুট্টা শস্যটি অধিক বেশি ভালো।
৭. গরুকে দৈনিক কত কেজি ঘাস দিতে হয়?
উত্তরঃ গরুর ওজন যদি ১০০ কেজির কাছাকাছি হয় সেক্ষেত্রে একটি গরুকে দৈনিক তিন কেজির বেশি তাজা সবুজ আঁশযুক্ত খাদ্য ঘাস দিতে হয়।
৮. একটি গুরু কত বছর বাঁচে?
উত্তরঃ একটি গরু প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর বেঁচে থাকে।
৯. দুগ্ধদানকারী গরুর খাদ্যের পরিমাণ কত?
উত্তরঃ সর্বোচ্চ স্তন্যদানের সময় একটি স্তন্যদানকারী গাভীর (60-80 দিন প্রসবোত্তর) প্রতিদিন 15-16 পাউন্ড টিডিএন শক্তির চাহিদা থাকে। প্রোটিন থেকে শক্তিতে গরুর প্রথম সীমিত পুষ্টিতে একটি পরিবর্তন হয়। মূলত এর উপর নির্ভর করে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
পরিশেষে: তো পাঠক বন্ধুরা, গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কিত আলোচনার ইতি টানছি এখানেই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর যদি এ সম্পর্কে আরো কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে কমেন্ট করে জানাবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।
আরও দেখুনঃ