গো খাদ্য কাকে বলে উত্তর জানতে আগ্রহী হলে পড়ে ফেলুন আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। কেননা আজ আমরা গো-খাদ্য কাকে বলে, গো খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাবার রয়েছে এবং গো খাদ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
গো খাদ্য কি?
গো-খাদ্য হলো গবাদি পশুর খাবার। মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ এজাতীয় গবাদি পশুর জন্য আমরা যে সকল খাবার সংগ্রহ করি সেগুলোই গো খাদ্য।
গো খাদ্য ইংরেজি
গো খাদ্যর ইংরেজি হলো feed, আর এর প্রতিশব্দ হচ্ছে ভোজন। তবে হ্যাঁ আপনি যদি গো-খাদ্য লিখে গুগল ট্রান্সলেট করে থাকেন সেক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দ হিসেবে আপনার সামনে তুলে ধরা হবে Cow food। কেননা গো খাদ্য মানে গরুর খাবার আর তাই এখানে cow food শব্দটি সঠিক অর্থ বহন করবে।
মূলত অনেকেই অনেকেই রয়েছেন যারা এমন প্রশ্ন বা কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করে থাকেন। আর তাদের জন্যই আমাদের আলোচনাকৃত এই পয়েন্ট।
এবার আসুন ধারাবাহিকভাবে জেনে নেই গো খাদ্য তালিকা, গো খাদ্য কাকে বলে তার পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা এবং গো-খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত।
আরও পড়ুনঃ রোগিং কি | রোগিং এর অপর নাম কি?
গো খাদ্য কাকে বলে?
যে সকল খাদ্য গবাদি পশুর খাবার তালিকায় অবস্থান করছে এবং যে সকল খাদ্য পরিপাক, শোষণ ও বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গবাদি পশুদের জন্য ব্যবহারযোগ্য সে সকল খাদ্যই হচ্ছে গো খাদ্য।
আরেকটু ভিন্নভাবে বললে বলা যায়– গবাদি পশু সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে শরীরের সকল প্রকার পুষ্টি চাহিদা পূরণের নিমিত্তে যে সকল খাবার খেয়ে থাকে সেগুলোই হচ্ছে গো খাদ্য।
অর্থাৎ গবাদি পশুর খাবার কে গো খাদ্য বলা হয়। এখন কথা হচ্ছে– গো খাদ্য অর্থাৎ গবাদি পশু গরু, ছাগল, মহিষ ভেড়া এজাতীয় প্রাণীদের জন্য কোন খাবার গুলো অধিক বেশি ভালো এবং তাদের খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাবার রয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে নিচের পয়েন্টটি এক নজরে পড়ে ফেলুন।
গো-খাদ্যের তালিকা
গো খাদ্য তালিকায় সাধারণত যেসকল খাবার থেকে থাকে সেগুলো হলো:-
- খরকুটো অর্থাৎ পোআল বা আওর
- কাঁচা ঘাস
- ভুট্টার পাতা
- কচুরিপানা
- বিভিন্ন গাছের পাতা
- শাক সবজির বাতিলকৃত অংশ
- সন বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ
- বাঁশের পাতা
- কলার পাতা
- বাসায় নষ্ট কৃত খাবার
- বাড়তি রান্না করা তরিতরকারি
- চালের গুড়া
- খুদের ভাত
- গমের আটা
- সরিষার খৈল
- তিলের খৈল
- কাঁচাখড়
- বিভিন্ন খোসা দানা প্রভৃতি।
মনে রাখবেন, গবাদি পশুদের জন্য ঘাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। আমাদের জন্য ভাত যেমন প্রধান খাবার ঠিক একইভাবে গবাদি পশুদের জন্য প্রধান খাবার হিসেবে আপনি ঘাসকে নির্বাচন করতে পারেন। আমাদের উল্লেখিত খাবারগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো গো খাদ্য হিসেবে গবাদি পশুদের কে খাওয়ানো হয়। যেমন– গমের বা ভুট্টার আটার রুটি, বিচে কলা, বিভিন্ন মোটাতাজাকরণ খাবার ও ঔষধ।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ কি | লক্ষ কি পরিকল্পনা?
গো খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকটি প্রাণীর সুষম খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর তাই গোখাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটুকু এটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন। তবে হ্যাঁ সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গোখরদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরব। তাহলে আসুন জেনে নেই গো খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি কি অর্থাৎ কোন কোন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গো খাদ্য পরিমিত পরিমাণে খাওয়ানো দরকার।
👉👉👉
✓ গবাদি পশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য
✓ গবাদি পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
✓ গবাদি পশুর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য
✓ গবাদি পশুর মুখের রুচি ঠিক রাখার জন্য
✓ গবাদি পশুর সুস্থতা ও সুরক্ষা প্রদানের জন্য।
আর তাই আপনি যদি গবাদি পশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং সুস্থতা কামনা করেন তাহলে অবশ্যই আমাদের উল্লেখিত গো খাদ্যগুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন খুদের ভাত গরু, ছাগল ভেড়া মহিষ ইত্যাদি গোবাদী পশুদের জন্য উপযুক্ত আহার। এগুলো শরীরের প্রচুর পরিমাণে শক্তি যোগায়।
বিভিন্ন মিক্স করা খাবার গবাদি পশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। অপরদিকে বিভিন্ন বীজের খোসা দানা গবাদি পশুর শরীরে প্রোটিন এবং খনিজ এর চাহিদা পূরণ করতে ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, ফসল খাবার গবাদি পশুর দেহে উচ্চমান প্রোটিন এবং উপযুক্ত খনিজ প্রদান করে। তাই গবাদি পশুর সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত পরিমিত পরিমাণ খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন এবং যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে পরামর্শ নিন পশু চিকিৎসকের।
গবাদি পশুর সুষম খাবার
ইতোমধ্যে আমরা গো-খাদ্য অর্থাৎ গবাদি পশুর খাবার সম্পর্কে অনেকটাই আলোচনা করেছি। সুষম খাবার কাকে বলে এটা নিশ্চয়ই জানেন? অনেকেই বলবেন হ্যাঁ, সুষম খাবার হচ্ছে সেই সকল খাবার যে সকল খাবারে খাদ্যের প্রত্যেকটি পুষ্টিগুনাগুন বিদ্যমান থাকে।
এর অর্থ দাঁড়ায় যে খাবারে খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান থাকে এবং যে উপাদান গুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেই খাবারগুলোই হচ্ছে সুষম খাবার বা পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। অর্থাৎ গবাদি পশুর সুষম খাবার বলতে মূলত ঐ সকল খাবার কে বোঝানো হচ্ছে যে সকল গো খাদ্যে বা গবাদি পশুর খাবারে সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
গবাদি পশুর খাদ্য ও পুষ্টি
আমরা সবাই কম বেশি জানি– খাদ্যের কাজ হচ্ছে প্রাণীদেহের ক্ষয় রোধ করা, দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, দৈহিক বৃদ্ধি সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা, দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমনে ভূমিকা রাখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা রক্ষা ও বৃদ্ধি করার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করা।
আর তাই প্রত্যেকটি জীবন্ত প্রাণীকে পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হয়। আমাদের যেমন সুস্থতার জন্য খাদ্য তালিকায় সকল ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখার প্রয়োজন পড়ে, ঠিক একই ভাবে গবাদি পশু পাখির জন্যেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য।
তবে পার্থক্য হচ্ছে গবাদি পশু বা পাখিদের জন্য মূলত উদ্ভিদ ও উদ্ভিজ্জজাত খাবার নির্বাচন করতে হয়। যেগুলোর নাম ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি। আর হ্যাঁ, এর মধ্যে কিছু কিছু খাবার আবার প্রাণিজ উৎস থেকেও এসে থাকে। যেগুলো এই খাদ্যর তালিকায় অবস্থান করছে। যেমন:-
- ফিস মিল
- ব্ল্যাড মিল
- ফেদার মিল প্রভৃতি।
আর তাই সব সময় চেষ্টা করুন গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার এর যোগান দেবার। মানে দানাদার ও আঁশ জাতীয় সকল প্রকার খাবারের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করুন। এবার আসুন জেনে নেই– গো-খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে।
গো-খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গো খাদ্য অর্থাৎ গবাদি পশুর খাবার ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে রয়েছে। এর জন্য আপনাকে প্রথমত জানতে হবে গবাদি পশুর খাদ্যের প্রকারভেদ। কেননা প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে আপনি সেই সকল খাবার সংরক্ষণের মাধ্যম খুঁজে পেতে পারেন।
দেখুন গবাদি পশু সাধারণত আশ জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে খেয়ে থাকে যে আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি। আর এই আশ জাতীয় খাবারের মধ্যে সাধারণত থাকছে– প্রাকৃতিক বা চাষ করার মাধ্যমে সংগৃহীত সবুজ ঘাস, খরকুটো বা সাইলেজ। অতএব আপনি যদি আশ জাতীয় খাবার বা এই গো খাদ্য সংগ্রহ করতে চান তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই জাতীয় খাবার উৎপাদনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যদিকে যদি আপনি প্রাণের উৎস থেকে খাবার সংগ্রহ করতে চান তাহলে ফিস মিল, ফেদার মিল এবং ব্লাডমিল সম্পর্কে জানতে হবে বিস্তারিত।
গবাদি পশুর প্রয়োজনীয় খাদ্য
গবাদি পশুর প্রয়োজনীয় খাবার হলো দানাদার বা আজ জাতীয় ও প্রাণিজ জাতীয় খাবার। যেগুলো খাদ্য তালিকায় আমরা তুলে ধরেছি। এবার আসুন জেনে নেই গবাদি পশুর জন্য পরিহারযোগ্য খাবার অর্থাৎ কোন কোন খাবার গবাদি পশুদের শরীরের উন্নতির থেকে অবনতি ঘটাতে পারে।
গবাদি পশুর পরিহারযোগ্য খাবার
গবাদি পশুর পরিহারযোগ্য খাবারের মধ্যে তেমন কোন খাবার নেই। তবে হ্যাঁ অনেকেই রয়েছেন যারা অনেক দিনের পচা বাসি খাবার খাইয়ে থাকেন। ফলে পেট ফাঁপা থেকে শুরু করে পেট খারাপের মত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। আর তাই সব সময় চেষ্টা করবেন পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর সেই সাথে নজর রাখবেন–
- পরিষ্কার পাত্রে গবাদি পশুকে খাবার খেতে দেওয়ার
- খাবারে যেন কোন বিষাক্ত পোকামাকড় না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবার
- অতিরিক্ত পচা খাবার না খাওয়ানোর
গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা
গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার অধিক বেশি নজর দিতে হবে– যেন গবাদি পশুদের কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকার ব্যবস্থাপনা করা হয়।
আর হ্যাঁ যদি আপনার লালন পালনকৃত গবাদি পশুর কোন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আনুমানিক ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন। গবাদি পশুর দ্রুত সুস্থতার জন্য নিকটস্থ ও পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন অথবা নিকটস্থ পশুর চিকিৎসালয় নিয়ে যেতে পারেন আপনার পালঙ্কিত গরু ছাগল ভেড়া বা মহিষটিকে।
তো পাঠক বন্ধুরা, গো-খাদ্য কাকে বলে এ সম্পর্কিত আলোচনার ইতি টানছি এখানেই। আপনাদের যদি গো খাদ্য কাকে বলে এ সম্পর্কে আরও কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আপনাদের জন্য আরও থাকছেঃ