ট্রান্সজেন্ডার মানে কি – সপ্তম শ্রেণির শরীফ থেকে শরিফা হয়ে ওঠার গল্প নিয়েই আমাদের আজকের নিবন্ধন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেতে না যেতেই চোখে পড়ছে একটি শব্দ, সেটা হলো – “শরীফ থেকে শরিফা”। মূলত পাঠ্য বই থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে আলোচনায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আর তারই মাধ্যমে প্রতিবাদ চিত্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই বিষয়টি। যে বিষয়টি কেন্দ্র করে অনেকেই সেই শিক্ষককে জানাচ্ছে বাহবা।
কিন্তু আপনি কি জানেন, সপ্তম শ্রেণীর শরীফ থেকে শরিফা হয়ে ওঠার গল্পের পেছনে উদ্দেশ্য কি, আর কেনই বা এই নিয়ে শুরু হয়েছে এত আলোচনা সমালোচনা! জানতে হলে আজকের পোস্টটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ দেখুন আর জেনে নিন— ট্রান্সজেন্ডার মানে কি, সপ্তম শ্রেণীর ট্রান্সজেন্ডার, ট্রান্সজেন্ডার কারা এবং শরীফ থেকে শরীফার গল্প।
ট্রান্সজেন্ডার মানে কি?
ট্রান্সজেন্ডার মানে হচ্ছে– এক লিঙ্গের মানুষ হয়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ বলে বা ভেবে নিজেকে প্রভাবিত করা। মূলত অনেকের রয়েছেন, যারা ছেলের শরীর নিয়ে জন্মে কিন্তু মনে মনে নারীর সত্তায় অবস্থান করেন। অতঃপর জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে তারা তাদের সেই শরীরটাকে নারীর দিকে নিয়ে যান।
ঠিক একইভাবে এমন অনেক নারী রয়েছেন, যারা নারীর শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন অথচ পুরুষের সত্তায় বেঁচে থাকেন এবং নিজের আচার-আচরণ, কাজকর্ম সব কিছুর মধ্য দিয়ে নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করেন। আর এই বিষয়টাই ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত।
জেন্ডার পরিচয় নির্ধারণ হয় ব্যক্তিগত ধারণার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু যখন একজন নারী বা একজন পুরুষ ভিন্ন প্রন্থায় নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং একলিঙ্গের মানুষ হয়ে অন্য লিঙ্গের সকল কিছু নিজেদের মধ্যে প্রয়োগ করার অর্থাৎ ট্রান্সফার করার চেষ্টা করেন, তখনই সেটা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় করানো হয়। অতএব তারাই তখন ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে নিজেদেরকে সমাজের সামনে তুলে ধরেন।
সপ্তম শ্রেণির ট্রান্সজেন্ডার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণীর ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে অনেকেই জানছেন সপ্তম শ্রেণীর ট্রান্সজেন্ডার বা শরীফ থেকে শরিফা এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে। আর তাই সরাসরি এই ব্যাপারে জানতে সার্চ করছেন গুগলে। মূলত ঐ সকল অডিয়েন্স বন্ধুদের কথা চিন্তা করেই আমরা সপ্তম শ্রেণীর ট্রান্সজেন্ডার এর বিষয়টি স্পষ্টতো ভাবে আলোচনা করব।
সপ্তম শ্রেণির শরীফ থেকে শরিফা
সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণীর এক পাঠ্য বইয়ে “শরিফার গল্প” নামের একটি গল্প রাখা হয়েছে। যে গল্পে এটা বলা হয়েছে–ছোটবেলা সবাই আমাকে ছেলে বলতো। কিন্তু আমি নিজেই একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মত হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। সে যদি ছেলে হয়েও মেয়ে হয়, তাহলে তার বিয়ে হবে কার সঙ্গে? বিষয়টা অবশ্যই এটা দাঁড়ালো যে, যদি সে মেয়ের মন মানসিকতা বা মেয়ে জেন্ডার এর হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ছেলেকে বিয়ে করবে!
মূলত এই বিষয়টি চিন্তাভাবনা করেই অভিযোগ তোলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। যার নাম আসিফ মাহতাব। মূলত বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক বাস্তবতা ও ভবিষ্যত শীর্ষক সেমিনারে, এই শিক্ষক উপস্থিত হোন। সেখানে তিনি শরীফ থেকে শরিফা হওয়ার গল্প নামক বইটি হাজির করেন এবং এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসে প্রতিবাদ জানান। তিনি মনে করেন ট্রান্সজেন্ডার এর গল্প সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে রাখার মাধ্যমে অল্প বয়স থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। আর এই মগজ ধোলাই এর মাধ্যমে বাচ্চারা সমকামিতার দিকে ঝুকবে। যা আমাদের দেশে অবৈধ এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একদমই হারাম।
আর তাই সেমিনারে সকলের সামনে শরীফ থেকে শরীফার গল্পের পৃষ্ঠা ছিড়ে সকলের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন– আমি মনে করি আপনাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের এই বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়া উচিত। তাই আমি পরামর্শ দিব আপনারা যদি সামর্থ্যবান হয়ে থাকেন তাহলে বইটি বইয়ের দোকান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে কিনে এই দুইটি পাতা ছিড়ে পরবর্তীতে আবারো বইয়ের দোকানে ফিরিয়ে দেবেন।
আর দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিক্রেতাকে জানিয়ে দেবেন সেটি যেন অর্ধেক নামে বিক্রি হয়, আর এতে করেই যেন মানুষ সতর্ক হয়ে যায়। মূলত এই শিক্ষক সমকামিতার বিষয়টি ভেবেই সপ্তম শ্রেণীর বই থেকে শরীফ থেকে শরীফার গল্পটি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সপ্তম শ্রেণীতে ট্রান্সজেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা | শরীফ থেকে শরিফা গল্পের মূল উদ্দেশ্য
মূলত শরিফা গল্পতে শরিফা চরিত্রকে কেন্দ্র করেই এত সমালোচনা। অনেকেই মনে করছে, এই গল্পের মাধ্যমে সমকামিতার বিষয়টিকে খুব সাধারন ভাবে দেখানো হচ্ছে। আবার অনেকেই মনে করছে যে, এই গল্পটির মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রদায় অর্থাৎ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রশনের বিষয়টি ইঙ্গিত করা হয়েছে। একেকজনের মন্তব্য একেক রকম এবং একেক ধারায় বর্ণিত।
তবে সপ্তম শ্রেণীর ট্রান্সজেন্ডার গল্প শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা জরুরী বা কতটা প্রয়োজন এটা নির্ভর করছে এই গল্পটি কে কিভাবে নিচ্ছে তার ওপর। আমরা সবাই জানি যে, আমাদের সমাজে সাধারণত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা নানাভাবে অপমানিত হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন। আর এই গল্পটি পড়ে এটাই মনে হয়েছে যে শরিফার গল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— “হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কে সচেতনতা করা এবং তাদের প্রতি বৈষম্য না করার প্রতি দিকনির্দেশনা দেওয়া”
কেননা এই গল্পে শুরুর দিকের যেমন লাইনটি ট্রান্সজেন্ডার এবং সমকামিতার বিষয়ের সাথে তুলনা করে অনেক কিছুই ভাবা যায়,ঠিক একই ভাবে শরীফার জবানিতে লেখা আরো কিছু লাইন রয়েছে যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে এটা বলা যায়, গল্পের সম্পূর্ণভাবে এটা স্পষ্ট করে বোঝানো হয়েছে তারা নারীও নয় আবার পুরুষও নয়। আর যেহেতু নারী ও নয় এবং পুরুষও নয় এই বিষয়টি একদমই স্পষ্টত, অতএব এখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দের প্রয়োগ করা ঠিক হচ্ছে না। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন তবে ইতিবাচকভাবে চিন্তাভাবনা করলে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য শরীফার গল্প অর্থাৎ ট্রান্স জেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তো পাঠক বন্ধুরা, “সপ্তম শ্রেণীর শরীফ থেকে শরীফার গল্প” এটিকে আপনি কেমন দৃষ্টিতে দেখছেন আপনার মতামত কি, অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
👄শরীফার প্রয়োজন হচ্ছে চিকিৎসা- স্বাধীনতা নয়👄
শরীফ থেকে শরীফার হওয়ার ব্যাপারটা যদি মনে মনে হয়ে থাকে,তাহলে এর সঠিক সমাধান হবে – তাকে মানসিক হসপিটালে (পাবনা) ভর্তি করে দেওয়া। কারণ এটা একটা মানসিক ও হরমোন জনিত রোগ। সেখানে গেলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে,সে তখন আর নিজেকে শরীফা মনে করবেনা। আর পাগল রোগিকে চিকিৎসা না করে, স্বাধীনতা দেওয়া ঠিক হবেনা।
🌹 💅👄🧠টেস্টোস্টেরোন হরমোনঃ
(যদি কোন ছেলের শরীরে টেস্টোস্টেরোনের স্তর কম হয় তাদের মধ্যে অনেক সময় মেয়েলি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে পারে।)
🎯 সুতরাং আমার গবেষণা মতে, তার প্রয়োজন হচ্ছে চিকিৎসা- স্বাধীনতা নয়।