বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন

বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন, খুবই কমন একটি প্রশ্ন প্রত্যেকটি মায়ের। কেননা শিশুরা বিভিন্ন কারণে মায়ের বুকের দুধ খেতে অনিহা প্রকাশ করে। আর একজন মা হিসেবে অবশ্যই, সেই সকল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাটা অত্যন্ত জরুরী। 

তাই বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন, এই প্রশ্নের সমাধানে আজ আমরা প্রকাশ করতে চলেছি আজকের পোস্ট। দেরি না করে জেনে নিন– শিশু কেন খেতে চায় না এবং কেন খাবারের প্রতি তীব্র অনিহা দেখায়, সেইসাথে মায়ের বুকের দুধ খেতেও নারাজ থাকে এ সম্পর্কে খুঁটিনাটি। 

আরও পড়ুনঃ শরীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ

বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন

বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন?

শিশু বুকের দুধ খেতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে একাধিক কারণ পরিলক্ষিত হয়। তবে সবার প্রথমে উল্লেখ করব– অনেক মা রয়েছেন যারা খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন শিশুদেরকে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে। 

কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, বুকের দুধ বের হওয়ার জন্য যে হরমোনটি সাধারণত কাজ করে থাকে, যদি খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন তাহলে সেই হরমোনের সঠিক নিঃসরণ হয় না এবং দুধ আসে না। ফলে বাচ্চারা দুধ খেতে অনিহা প্রকাশ করে। 

এছাড়াও বাচ্চা বুকের দুধ খেতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে আরো যা যা রয়েছে সেগুলো হলো —

  • বাচ্চাদের মুখে বা জিব্বা তে ঘা এবং ক্ষতের সৃষ্টি
  • দীর্ঘ সময় যাবত অসুস্থতায় ভুগতে থাকা
  • কড়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়া
  • জিব্বাকে সাদা পর্দার মতো ফাঙ্গাস জমে যাওয়া
  • পেট ভরা থাকা
  • মুখে কোন কিছুর স্বাদ অনুভব না করা
  • অতিরিক্ত দুধের সরবরাহ
  • শুষ্ক নিপল অর্থাৎ বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না থাকা এবং 
  • মাস্টিটিস এর সমস্যা।

আরও পড়ুনঃ লিভার ভালো রাখার ব্যায়ামসমূহ

 বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম হচ্ছে খুব বেশি তাড়াহুড়ো না করে সঠিক পজিশনে দুধ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এর জন্য শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি জানুন নিচের অংশটুকু পড়ার মাধ্যমে। 

প্রথমত: আপনি যদি একজন মা হয়ে থাকেন এবং শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে বুকের দুধ খাওয়াতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আরামদায়ক অবস্থান নির্বাচন করতে হবে। হতে পারে এক্ষেত্রে দেয়ালে কিংবা বালিশে হেলান দিয়ে বসে অথবা শুয়ে আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। 

আর হ্যাঁ, যদি বসে থাকা অবস্থায় বাচ্চা শিশুকে দুধ খাওয়ান সেক্ষেত্রে পিঠ সোজা রাখবেন এবং কাঁধ উঁচু করে রাখবেন না। মানে সোজা অবস্থায় বসে থেকে শিশুর দিকে তাকিয়ে কাঁধ কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখবেন। 

দ্বিতীয়তঃ যে সকল মায়েদের হাতের সাহায্যে দুধ চেপে বের করতে হয় সেই দুধ যদি শিশুদেরকে খাওয়াতে চান তাহলে অবশ্যই কাপে কিংবা চামচে করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এই দুধ বোতলে বা ফিডারে খাওয়ানো উচিত নয়। 

পাশাপাশি বুকে থেকে চেপে বের করা দুধ শিশুকে খাওয়াবেন 6 থেকে 8 ঘণ্টার মধ্যে। আর যদি ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন তাহলে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা রাখতে পারবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বুকের দুধ চেপে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ানো। 

আর হ্যাঁ, আপনি যে পাত্রে করে শিশুকে দুধ খাওয়াবেন অবশ্যই দুধ কিছুটা গুলিয়ে নেবেন অথবা পাত্রটি ঝাকাবেন। কারণ এটা নিশ্চয়ই জানবেন যে কিছুক্ষণ যাবত যদি দুধ রেখে দেওয়া হয় তাহলে উপরের চর্বি ভেসে থাকে। ফলে শিশুরা সেই দুধ ভালো ভাবে খেতে চায় না। 

তৃতীয়ত: যদি আপনার ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলেও শিশুরা দুধ খেতে চায় না। যেইটা আমরা মাস্টিটিস নামে সম্বোধন করেছি ইতিমধ্যে। মূলত এই সমস্যার সমাধানের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন তাদের নির্দেশনা মতাবেক শিশুদেরকে পান করান বুকের দুধ।

এবার আসুন আলোচনার শেষ পর্যায়ে বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর সম্পর্কে জেনে নেই এবং আলোচনার সমাপ্তি টানি। 

১. বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে না পারলে কি হয়?

✓ মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার একটি শিশুর জন্য। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং সঠিক ধারায় বিকশিত হওয়ার জন্য অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোটা জরুরী। তবে মাতৃদুগ্ধ সরবরাহ পর্যাপ্ত মনে না হলে একটা শিশুকে তাদের ফর্মুলা ছাড়াও উপলব্ধ বুকের দুধ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 

২. ৩ মাসের বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়াতে চায় না কেন?

✓ প্রশ্নটিতে কিছু ভুল রয়েছে। সঠিক প্রশ্ন হল তিন মাসের বাচ্চা বুকের দুধ খেতে চায় না কেন? আসলে স্তন পান করানোর সময় ঠান্ডা লাগা অথবা শিশুর নাকে ঠাসা লেগে শ্বাস নেওয়ার সমস্যার কারণে কখনো কখনো দুধ খাওয়াতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে তিন মাসের বাচ্চারা। এছাড়াও সঠিক পদ্ধতিতে বুকের দুধ না খাওয়ালে বা আপনার মানসিক চাপ বা বিভ্রান্তির কারণেও কখনো কখনো সেটা শিশুর ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে আর তাই তারা বুকের দুধ খেতে চায় না। তবে আপনি যদি আমাদের দেওয়া ইনস্ট্রাকশন মেনে আপনার কাছে কে বুকের দুধ খাওয়ান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান মিলবে।

৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কি বাচ্চার সাথে কথা বলা উচিত?

✓ জি অবশ্যই, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার সাথে কথা বলে তাকে ব্যস্ত রাখার ছলে দুধ খাওয়ানো ভালো। সেই সাথে তাদেরকে আলতো হাতের স্পর্শ দিয়ে ঘুম পাড়ানোটাও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

৪. স্তন প্রত্যাখ্যান কি?

✓ একটি শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না তখনই সেটাকে স্তন প্রত্যাখ্যান বলে আখ্যায়িত করা হয়। অতএব স্তন প্রত্যাখ্যান হচ্ছে বাচ্চা শিশুরা সঠিকভাবে সঠিক পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ না খাওয়া।

৫. কিভাবে বুঝব বাচ্চা বুকের দুধ পাচ্ছে?

✓ এটা খুবই সাধারণ একটা বিষয়। আপনার বুকে দুধ রয়েছে কিনা এবং আপনার বাচ্চা দুধ পাচ্ছে কিনা এটা মূলত তার খাওয়ার ধরন এবং পেট ভরার বিষয়ের উপর নজর রাখলে বুঝতে পারবেন।

৬. কি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়?

✓ এমন কোন খাবার নেই যেটাকে নির্দিষ্ট করে বলা যায় যে এই খাবারটি খেলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়। তবে যারা মা হয়েছেন তারা যদি খাদত তালিকায় শর্করা আমিষ ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খান সেইসাথে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন সে ক্ষেত্রে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।

৭. কোন ফল খেলে বুকের দুধ বাড়ে?

✓ প্রায় প্রত্যেকটি ফলেই স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা আলাদা পুষ্টির যোগান দেয়। তবে পাকা পেঁপে খেলে মায়েদের শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোনের উৎপাদন বেশি হয় ফলে বুকের দুধ অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

আরও দেখুনঃ

All Easy Google News
Setu
Setu

Assalamu Alaikum, I am Setu. An ordinary girl studying in honors. Currently engaged in the world of technology. I am very passionate about blogging and writing. I like to learn and share something new😇

Articles: 138

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *